সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে চীনের অগ্রগতিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্মার্টফোন থেকে যুদ্ধাস্ত্র পর্যন্ত সবকিছুর জন্য এই চিপ গুরুত্বপূর্ণ।
অক্টোবরে ওয়াশিংটন চীনে 'সেমিকন্ডাক্টর' রপ্তানির বিষয়ে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে। শর্ত অনুযায়ী মার্কিন সরঞ্জাম বা সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে কোনও প্রতিষ্ঠান চিপ উৎপাদন করলে সেই চিপ চীনে রপ্তানি করতে হলে অবশ্যই তাদের বিশেষ লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।
এছাড়াও মার্কিন নাগরিক এবং গ্রিন কার্ডধারীদের নির্দিষ্ট চীনা চিপ কোম্পানিতে কাজ করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
এর ফলে সেমিকন্ডাক্টর তৈরির ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রযুক্তি ও মানব সম্পদ ব্যবহারের দরজা বন্ধ হয়ে যায় চীনের জন্য। যা নিশ্চিত ভাবে চীনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে প্রভাবিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্র কেন এমন করছে?
উন্নত সেমিকন্ডাক্টর সুপার কম্পিউটার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সামরিক হার্ডওয়্যার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীনের প্রযুক্তির ব্যবহার তার নিজস্ব জাতীয় নিরাপত্তার জন্যেই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউএস কমার্স ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি অ্যালান এস্তেভেজ এবিষয়ে বলেন, "আমাদের উদ্দেশ্য সামরিক অ্যাপ্লিকেশন সহ সংবেদনশীল প্রযুক্তি চীন যাতে আয়ত্ব করতে না পারে তা নিশ্চিত করা"।
তবে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে "প্রযুক্তি সন্ত্রাস" বলে অভিহিত করেছে। চীন ছাড়াও এশিয়ার যে দেশগুলো এই চিপ উৎপাদন করে - যেমন তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা চীন-আমেরিকার এই প্রতিযোগিতা তাদের ব্যবসাকে প্রভাবিত করবে।
ইতিমধ্যে মার্কিন বিধিনিষেধের ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক কম্পিউটার চিপ ডিজাইনার 'এআরএম' নিশ্চিত করেছে যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবা সহ চীনা সংস্থাগুলির কাছে তার সবচেয়ে উন্নত ডিজাইন বিক্রি করতে পারছে না।
ডব্লিউটিওতে চীনের অভিযোগ
সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য সম্পর্কিত প্রযুক্তির রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। চীন অভিযোগ করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং উত্পাদন খাতে তার নেতৃত্ব" বজায় রাখতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের অপব্যবহার করছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী শিল্প সরবরাহ চেইনের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়ায় বলেছে যে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত উদ্বেগ নিষ্পত্তি করার জন্য বাণিজ্য সংস্থা মোটেও কোনও "উপযুক্ত ফোরাম নয়"।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে চীনের চিপ শিল্পকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে, চীন বলছে যুক্তরাষ্ট্রের বাঁধা কাটিয়ে অচিরেই চিপ শিল্পে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠবে দেশটি।