--> ন্যাটো-রাশিয়ার ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়’ পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা

ন্যাটো-রাশিয়ার ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়’ পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা

চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো একটি কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলা চালান, তাহলে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধটা শুরু হয়ে যেতে পারে। এই যুদ্ধ হবে ভালো ও মন্দের মধ্যে।

একে তো ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে মুখোমুখি বিশ্বের ক্ষমতাধর দুই পক্ষ। তারপর আবার বাইডেনের পারমাণবিক যুদ্ধের আভাস। অনেকেরই মনে হবে, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তবে কেউ এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে এখনো চোখে পড়েনি। 

সবকিছু বরং আরও খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে। দুই পক্ষের দেশগুলো একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, বাড়াচ্ছে সামরিক শক্তি। ফলে মনে হচ্ছে, পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি এখন শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ থাকছে না, তা সত্যি সত্যিই শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

গত সপ্তাহে পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া শুরু করেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। তারা এ ধরনের মহড়া নিয়মিতই চালায়। তবে এবারের বিষয়টি ভিন্ন। একে তো পারমাণবিক হামলার হুমকিতে উত্তপ্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গন, তারপর আবার একই সময়ে পারমাণবিক মহড়া চালাচ্ছে মস্কো। দুই পক্ষে মহড়ার সময় মিলে যাওয়াটা কাকতালীয় কোনো ঘটনা না।

ভয়াবহ যুদ্ধ বেধে যাওয়ার হুঁশিয়ারি এসেছে বাইডেনের মতো একজন শীর্ষস্থানীয় বিশ্বনেতার মুখ থেকে। রাশিয়ার পাশাপাশি পারমাণবিক মহড়া চালিয়েছে পশ্চিমাদের জোট ন্যাটোও। এখানে একটি প্রশ্ন ওঠে। তা হলো পারমাণবিক যুদ্ধ ঘিরে যে উত্তেজনা বাড়ছে, তাতে পশ্চিমাদের কি ভূমিকা নেই? জবাবটা হলো, এই যুদ্ধের ঝুঁকি কমাতে ব্যর্থ হচ্ছেন পশ্চিমা নেতারা।

এবার একটু পেছনে ফেরা যাক। আগস্ট মাস। তখনো পুতিন আকার–ইঙ্গিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেননি। সে সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা তুলেছিলেন। এখন যাঁদের কার্যকলাপে বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে, তাঁদের গুতেরেসের ওই সতর্কতা কানে তোলা উচিত ছিল।

আগস্টে আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, এই মুহূর্তে বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গত শতকে স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে এ ঝুঁকি এতটা দেখা যায়নি। একই সঙ্গে ‘নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের মিথ্যা অজুহাত’ দেখিয়ে যেসব দেশ চরম ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের পেছনে বিপুল খরচ করছে, তাদের সমালোচনা করেন তিনি।

১৯৪৫ সালের পর বিশ্বে পারমাণবিক হামলা হয়নি। বিষয়টিকে সৌভাগ্যের বলে উল্লেখ করেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তবে তিনি এটাও বলেছিলেন, ‘ভাগ্য বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হতে পারে না। আর পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা ঘিরে যে বৈশ্বিক উত্তেজনা, তা থেকে সুরক্ষাও দিতে পারে না।’

তাই বলা যায়, ভাগ্যের ওপর ভরসা করে বসে থাকা যাবে না। এটাও মাথায় রাখা উচিত, আজকের দিকে পারমাণবিক হামলার অর্থ কী, আর এই হামলা চালালে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে।

১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার পর আনুমানিক ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এঁদের অনেকেই ছিলেন যাঁরা বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন। মারাত্মকভাবে দগ্ধ হওয়ায় কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁরা মারা যান। অনেকেই মারা গিয়েছিলেন উদ্ধারব্যবস্থা ও চিকিৎসাসেবার অভাবে। কারণ, বোমার আঘাতে এসব পরিষেবা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর পরে বোমার তেজষ্ক্রিয়তা ও বিষক্রিয়ায় ক্যানসার এবং জন্মগত ত্রুটির কারণে মৃত্যুটাও কম ছিল না।

এ হিসাব প্রায় ৮০ বছর আগের। আজকের দিনের পারমাণবিক বোমাগুলো হিরোশিমায় ফেলা বোমার চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী। যেসব পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ন্যাটো মহড়া চালিয়েছে, সেগুলো হিরোশিমায় ফেলা বোমার চেয়ে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি ধ্বংসাত্মক।

শঙ্কাটা শুধু পারমাণবিক অস্ত্র নিয়েই নয়। এমন অস্ত্রধারী দেশগুলোর নীতিও দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কয়েক দশক ধরে এই দেশগুলো তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত কমিয়েছিল। এখন ওই চিত্রে বদল এসেছে। এখন পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পারমাণবিক শক্তিতে চালিত ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম সাবমেরিন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে ফ্রান্স। আর নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য, ভারত ও পাকিস্তান।

তবে সবচেয়ে ভয়ের বিষয়, এসব অস্ত্র ব্যবহারে বিশ্বনেতাদের হুমকি। তাঁদের কথাবার্তা থেকে এটাই মনে হচ্ছে, পারমাণবিক অস্ত্র নেই, এমন দেশেও হামলা চালাতে পিছপা হবেন না তাঁরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পারমাণবিক হামলাকে নিষিদ্ধ হিসেবে দেখা হতো। সে ধারণা এখন বদলাতে দেখা যাচ্ছে।

সত্যিই যদি পারমাণবিক যুদ্ধ বাধে, তবে এর ফল ভোগ করতে হবে পুরো বিশ্বকে। কারণ, পারমাণবিক বোমার তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব একটি দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাই বলা যায়, পারমাণবিক যুদ্ধ পুরো মানবসম্প্রদায়—এমনকি সব প্রাণীর জন্যই হুমকির।

এ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কী করতে হবে? জবাবটা সহজ, বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করা। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চায়। তারা এটাও খুব ভালোভাবে জানে এই অস্ত্রধারী মাত্র ৯টি দেশকে নিয়েই পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি। তবে ভালো বিষয়, পারমাণবিক অস্ত্রের সম্প্রসারণ ঠেকাতে ও এই অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধে চুক্তি হয়েছে। বিশ্বের বড় একটি অংশ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠেছে।

গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতারা একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘পারমাণবিক যুদ্ধে কখনোই জয়লাভ করা যায় না এবং এই যুদ্ধ কখনোই শুরু করা উচিত নয়।’

গত সোমবার জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ সপ্তাহ শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে বিশ্বনেতাদের গত জানুয়ারিতে দেওয়া ওই প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করাই রক্ষা করতে পারে বিশ্বকে। তাই সময় ফোরানোর আগেই নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

By using this site, you agree to our Privacy Policy.
By using this site, you agree to our Privacy Policy.
নাম

al-jazeera,10,bangladesh,27,important,23,india,2,others,2,world,25,
ltr
item
Al Jazeera Bangla News - আল জাজিরা বাংলা নিউজ: ন্যাটো-রাশিয়ার ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়’ পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা
ন্যাটো-রাশিয়ার ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়’ পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjWsmkGU-kt3xILSMbkY_4HNrQ0E5PDPzg2UKlOkaEztmSEu0_Oj9Rddw31jnDq-vqj_pGKznyLC__q55QWyvipYORMZzgBgjhbQSLeozcB0YuSq-zN8eYjGShQTsUvc9_MeovkNG2RxafSpzoEAzUscZSH_tgUJbll20ZOM7jdNHXOWFe8ylzT_PUr/s320/IMG_20221029_171905.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjWsmkGU-kt3xILSMbkY_4HNrQ0E5PDPzg2UKlOkaEztmSEu0_Oj9Rddw31jnDq-vqj_pGKznyLC__q55QWyvipYORMZzgBgjhbQSLeozcB0YuSq-zN8eYjGShQTsUvc9_MeovkNG2RxafSpzoEAzUscZSH_tgUJbll20ZOM7jdNHXOWFe8ylzT_PUr/s72-c/IMG_20221029_171905.jpg
Al Jazeera Bangla News - আল জাজিরা বাংলা নিউজ
https://bangla.al-jazeera.xyz/2022/10/russia-nato.html
https://bangla.al-jazeera.xyz/
https://bangla.al-jazeera.xyz/
https://bangla.al-jazeera.xyz/2022/10/russia-nato.html
true
8943782346888826352
UTF-8
Loaded All Posts খুঁজে পাওয়া যায়নি সব দেখুন বিস্তারিত জবাব জবাব বাতিল ডিলিট By হোম পাতা সমূহ পোস্টগুলি সব দেখুন আপনার জন্য নির্বাচিত বিষয় সংরক্ষণাগার সার্চ সকল পোস্ট Not found any post match with your request Back Home রবিবার সোমবার মঙ্গলবার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার শনিবার রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহঃ শুক্র শনি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর ডিসেম্বর জানু ফেব মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টঃ অক্টোঃ নভেঃ ডিসেঃ এই মাত্র 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 ঘণ্টা আগে $$1$$ hours ago গতকাল $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago ফোলোয়ারস ফোলো করুন THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content