--> ইরানে বিক্ষোভ: আহমাদিনেজাদ নীরব কেন

ইরানে বিক্ষোভ: আহমাদিনেজাদ নীরব কেন

খামেনির সঙ্গে বিরোধের পরও ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে চলমান বিক্ষোভে নীরব দেখা যাচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এক দশক ধরে তিনি পরিবর্তনের কথা বলছেন, অথচ পরিবর্তনের ডাক আসার পরও তিনি চুপ। আহমাদিনেজাদের সাবেক উপদেষ্টার মতে, খামেনির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারি সুবিধা হারাতে চান না তিনি।

নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরান। এরই মধ্যে চাপে পড়েছে দেশটির ক্ষমতাসীনরা।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর প্রভাবশালী অনেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নিজেদের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে বলেও স্বীকার করেছেন।

কিন্তু এমন বিক্ষোভের মধ্যেও ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে কোনো বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে না, এমনকি তাকে গণমাধ্যমকর্মীরা পাচ্ছেনও না।

অনেকেই ভেবেছিলেন ইরানের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরোধী হিসেবে তিনি ক্যামেরাপ্রেমী, পপুলিস্ট রাজনীতিবিদের মতো সুযোগটাকে ব্যবহার করবেন। কিন্তু তিনি একেবারেই নীরব।

আহমাদিনেজাদের জন্য সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার কাউন্সিলের সদস্যপদ রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এখন তিনি দেখেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিকে কাউন্সিলের সদস্যপদে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বিবেচনা করেননি। এই সদস্যপদ ছাড়া ইরানে তার (আহমেদিনেজাদ) সরকারি অবস্থান থাকবে না।

আয়তুল্লাহ আলি খামিনির সঙ্গে তার মতবিরোধ অজানা কিছু নয়। কিংবা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির বিরুদ্ধে তার অবস্থান গোপন কিছু নয়। এর পরও তিনি তাদের সমালোচনা করছেন না, তেমনি নিজের সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন করছেন বলেও মনে হচ্ছে না।

খামেনির সঙ্গে আহমাদিনেজাদের বিরোধ

আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় থাকার সময়েও খামেনির সঙ্গে তার চাপা বিরোধ ছিল। ২০১১ সালে যখন তিনি খামেনির অনুগত গোয়েন্দামন্ত্রী হেইদার মোসলেহিকে বরখাস্ত করেন, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার সঙ্গে তার বিরোধের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এমনকি সে সময় কয়েক সপ্তাহ তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন।

খামেনির সঙ্গে বিরোধের পরও চুপ কেন আহমাদিনেজাদ

বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ও সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সঙ্গে চাপা বিরোধ থাকলেও কেন আহমেদানিজাদ চুপ করে আছেন তার একটি ব্যাখ্যা সংস্কারপন্থি সংবাদমাধ্যম ফারারুকে দিয়েছেন আহমেদানিজাদের সাবেক উপদেষ্টা ও বিতর্কিত রাজনীতিবিদ আবদুল রেজা দাভারি।

তিনি বলেন, ‘আহমাদিনেজাদের জন্য সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার কাউন্সিলের সদস্যপদ রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এখন তিনি দেখেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিকে কাউন্সিলের সদস্যপদে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বিবেচনা করেননি। এই সদস্য পদ ছাড়া ইরানে তার (আহমাদিনেজাদ) কোনো সরকারি অবস্থান থাকবে না।’  তার জন্য এক্সপেডিয়েন্সি কাউন্সিলে অবস্থান রক্ষা করা অত্যাবশ্যক, যদিও কাউন্সিলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা উষ্ণ নয়।

অর্থাৎ সরকারিভাবে আহমাদিনেজাদ যে সম্মান ও মর্যাদা পান তার চাবি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। যেকোনো সময় তিনি তা কেড়ে নিতে পারেন।

সমর্থকদের এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি

সংস্কারপন্থি সংবাদমাধ্যম ফারারু জানিয়েছে, চলমান বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে পূর্ব তেহরান বা উত্তর তেহরানে তার সমর্থকদের সঙ্গে হওয়া সাপ্তাহিক বৈঠক তিনি বাতিল করেছেন।

রক্ষণশীল পত্রিকা সারাটের সম্পাদক আলী গাফফারিয়ান বলেছেন যে- হয় আহমাদিনেজাদ নীরব থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা সরকার তাকে নীরব করেছে। যাই হোক, তিনি এমন ব্যক্তিত্ব যে তার ওপর আরোপিত কিছুর কাছে নতি স্বীকার করার সম্ভাবনা নেই। সম্ভবত, বিদ্রোহের মধ্যে সাইড লাইনে (নিরপেক্ষ) থাকা তার নিজের সিদ্ধান্ত।

মাহমুদ আহমাদিনেজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের জন্য তিনি আইআরজিসির সাহায্য নিয়েছিলেন। সেই বছরের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ সময় আহমাদিনেজাদের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করে আইআরজিসি। ইরানের জনগণের এত দ্রুত সেই বিষয়টি ভোলার কথা নয়।

সেই হিসেবে আইআরজিসির বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়াও আহমাদিনেজাদের জন্য মোটেও সহজ কোনো কাজ নয়।

বরাবরই বিতর্কিত আহমাদিনেজাদ

রোইদাদ২৪ ওয়েবসাইটে তার বিষয়ে লেখা হয়েছে, আহমাদিনেজাদের কিছু মন্তব্য তাকে বিখ্যাত সংস্কার ফ্রন্টের রাজনীতিবিদদের চেয়ে বেশি সংস্কারবাদী হিসেবে তুলে ধরে। তবে তিনি রক্ষণশীল নন, সংস্কারপন্থিও নন। তিনি তৃতীয় ধরনের রাজনীতিবিদ।

২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আহমাদিনেজাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সংস্কারপন্থি মীর হোসেন মুসাভি তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘এমন একজন যে আপনার চোখের দিকে তাকাবে এবং মিথ্যা বলবে।’

গত এক দশক ধরে আহমাদিনেজাদ পরিবর্তনের কথা বলে আসছেন। অথচ যখন জনগণের থেকে পরিবর্তনের ডাক এসেছে। তিনি নীরবতার পথ বেছে নিয়েছেন। 

নাম

al-jazeera,10,bangladesh,27,important,23,india,2,others,2,world,25,
ltr
item
Al Jazeera Bangla News - আল জাজিরা বাংলা নিউজ: ইরানে বিক্ষোভ: আহমাদিনেজাদ নীরব কেন
ইরানে বিক্ষোভ: আহমাদিনেজাদ নীরব কেন
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiDxN94jqJBIE17W-0voXZSoB2VafHB7pML2uOvm468qPrQgcPKo83jyIjunlauaTkDhlmt5tr1zSAXen8L8w8MBqDdx_e5PkyDlw8BJ8RS5005xpMuxwvyxflMofTLvqpPvk4E7tYeArULs6aQJOxsz5c3BFDmViU4Ho8N37fZe_rXsdT0szP5FTSg/s320/AHMADINEJAD.JPG
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiDxN94jqJBIE17W-0voXZSoB2VafHB7pML2uOvm468qPrQgcPKo83jyIjunlauaTkDhlmt5tr1zSAXen8L8w8MBqDdx_e5PkyDlw8BJ8RS5005xpMuxwvyxflMofTLvqpPvk4E7tYeArULs6aQJOxsz5c3BFDmViU4Ho8N37fZe_rXsdT0szP5FTSg/s72-c/AHMADINEJAD.JPG
Al Jazeera Bangla News - আল জাজিরা বাংলা নিউজ
https://bangla.al-jazeera.xyz/2022/10/iran-ahmadinejad.html
https://bangla.al-jazeera.xyz/
https://bangla.al-jazeera.xyz/
https://bangla.al-jazeera.xyz/2022/10/iran-ahmadinejad.html
true
8943782346888826352
UTF-8
Loaded All Posts খুঁজে পাওয়া যায়নি সব দেখুন বিস্তারিত জবাব জবাব বাতিল ডিলিট By হোম পাতা সমূহ পোস্টগুলি সব দেখুন আপনার জন্য নির্বাচিত বিষয় সংরক্ষণাগার সার্চ সকল পোস্ট Not found any post match with your request Back Home রবিবার সোমবার মঙ্গলবার বুধবার বৃহস্পতিবার শুক্রবার শনিবার রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহঃ শুক্র শনি জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর অক্টোবর নভেম্বর ডিসেম্বর জানু ফেব মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টঃ অক্টোঃ নভেঃ ডিসেঃ এই মাত্র 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 ঘণ্টা আগে $$1$$ hours ago গতকাল $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago ফোলোয়ারস ফোলো করুন THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content