আল জাজিরা বাংলা: গত শুক্রবার মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, খুন প্রভৃতি নানা অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে এলিট ফোর্স র্যাবের ৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। শনিবার বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান সহ বাংলাদেশে অতি গরুত্বপূর্ণ সাত নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপর আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাহিনীটির বিরুদ্ধে ২০০৮ সাল থেকে শতাধিক গুম ও প্রায় ৬ শতাধিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বর্তমান বা সাবেক সাত কর্মকর্তা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক র্যাব প্রধান এবং বর্তমানে দেশটির জাতীয় পুলিশ বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বে থাকা বেনজির আহমেদও আছেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্ট্যাট অন্তোনি ব্লিঙ্কটেন বলেন, “আমরা আমাদের বৈদেশিক নীতির কেন্দ্রে মানবাধিকারকে আগ্রাধিকার দিচ্ছি। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে আমরা উপযুক্ত সরঞ্জাম এবং কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করে আমরা এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবো।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিত মাসুদ বিন মোমেন অতিদ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের এমন একটি সংস্থাকে দুর্বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সংস্থাটি সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার এবং অন্যান্য জঘন্য আন্তঃজাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রভাগে ছিল।”
অন্যদিকে, র্যাব কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনা বলে দাবি করেছেন র্যাবের ডেপুটি চিফ কেএম আজাদ, যিনি নিজেও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন। তিনি বলেন, একজন অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, তাহলে দেশের স্বার্থে এই মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও এই পদক্ষেপের বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সবসময় তদন্ত করা হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা জানাজানি হলে ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে তদন্ত করা হয়। কোনো সরকারি সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে এখানে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। অতিরঞ্জিত খবরের ভিত্তিতে তারা এটা করেছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সাথে বন্দুকযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়, যার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।”
এদিকে স্থানীয় অধিকার কর্মীরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
“এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি যথার্থ পদক্ষেপ। তবে অপহরণ এবং জোরপূর্বক গুমের সাথে জড়িত আরও কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল,” বলে মন্তব্য করেছেন সানজিদা ইসলাম। তিনি মায়ের ডাক নামক একটি সংগঠনের একজন সংগঠক, যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ নিরাপত্তা সংস্থা বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তবে ২০১৩ সালে তার ভাইকে অপহরণ ও গুমের সঙ্গে র্যবই মূলত জড়িত ছিল।
বাংলাদেশে চরমপন্থা ও গুরুতর অপরাধ দমনে ২০০৪ সালে র্যাব গঠন করা হয়। তবে এটি নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত অপরাধীদের হত্যা করার জন্য বন্দুকযুদ্ধ মঞ্চস্থ করা সহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগে বাহিনীটি অভিযুক্ত।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে, বাংলাদেশের একটি আদালত নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহরে সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ র্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা।
https://www.aljazeera.com/news/2021/12/11/bangladesh-protests-us-sanctions-of-its-top-security-chiefs